আপেক্ষিক তত্ত্ব কি । আপেক্ষিক তত্ত্ব কাকে বলে
আপেক্ষিক তত্ত্ব (Theory of Relativity) হলো বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলোর মধ্যে একটি, যা পদার্থবিজ্ঞানের ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে দেয়। এই তত্ত্ব মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত: বিশেষ আপেক্ষিকতা ও সাধারণ আপেক্ষিকতা। ১৯০৫ সালে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন তাঁর বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রকাশ করেন এবং ১৯১৫ সালে সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। এই দুটি তত্ত্ব মহাবিশ্বের গতিবিদ্যা ও মহাকর্ষের মৌলিক প্রাকৃতিক নিয়মকে ব্যাখ্যা করে।
বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব
বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব মূলত দুইটি মৌলিক অনুমানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে:
- আপেক্ষিকতার নীতি: সমস্ত ভৌত নিয়ম অভিন্ন থাকে, তা যেকোনো জড়তামূলক কাঠামোর মধ্যেই হোক না কেন।
- আলোর বেগ ধ্রুবক: শূন্যস্থানে সকল পর্যবেক্ষকের জন্য আলো সর্বদা ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ মিটার প্রতি সেকেন্ড গতিতে চলে, তা যেকোনো উৎস থেকেই নির্গত হোক না কেন।
এই তত্ত্ব থেকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল পাওয়া যায়
- সময় সম্প্রসারণ (Time Dilation): উচ্চ গতিতে চলা বস্তুতে সময় ধীরে চলে।
- দৈর্ঘ্য সংকোচন (Length Contraction): উচ্চ গতিতে চলা বস্তুর দৈর্ঘ্য সংকুচিত হয়।
- ভর-শক্তি সম্পর্ক (E = mc²): ভর ও শক্তির মধ্যে একটি সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব
সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব মূলত মহাকর্ষের একটি নতুন ব্যাখ্যা প্রদান করে। আইনস্টাইন দেখিয়েছিলেন যে মহাকর্ষ কোনো বল নয়, বরং এটি সময়-স্থান (spacetime) এর বক্রতার ফলে ঘটে। যখন একটি বিশাল বস্তু, যেমন সূর্য বা গ্রহ, স্থান-কালের কাঠামোকে বেঁকিয়ে দেয়, তখন তার চারপাশের অন্যান্য বস্তু এই বাঁকানো পথে চলতে বাধ্য হয়।
এই তত্ত্ব থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব সম্পর্কে জানা যায়:
- গ্র্যাভিটেশনাল রেডশিফট (Gravitational Redshift): মহাকর্ষ শক্তিশালী হলে আলো লাল বর্ণের দিকে সরতে থাকে।
- গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং (Gravitational Lensing): বিশাল মহাকর্ষীয় বস্তুর কারণে আলো বাঁকতে পারে।
- কালো গহ্বর (Black Hole): মহাকর্ষ এতই শক্তিশালী যে আলোও এর অভ্যন্তর থেকে বের হতে পারে না।
আপেক্ষিক তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা কে
আপেক্ষিক তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হলেন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein)। তিনি ১৯০৫ সালে বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব (Special Theory of Relativity) এবং ১৯১৫ সালে সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব (General Theory of Relativity) প্রকাশ করেন। এই তত্ত্বগুলি মহাবিশ্বে গতি, স্থান, সময় ও মহাকর্ষের সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করে দেয় এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটায়।
আপেক্ষিক তত্ত্ব বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার, যা মহাবিশ্বের প্রকৃত স্বরূপ বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি শুধুমাত্র তাত্ত্বিক বিজ্ঞানেই নয়, বরং জিপিএস প্রযুক্তি, পারমাণবিক শক্তি ও মহাকাশ গবেষণার মতো বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই তত্ত্বের মাধ্যমে আমরা মহাবিশ্বের গভীরতর রহস্য উন্মোচনের পথে এগিয়ে চলেছি।